আংশিক পাতন হলাে এক ধরনের পাতন। এখানে বাষ্পকে ঠাণ্ডা করার জন্য লম্বা কলাম থাকে। কলাম আবার বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। নিচের অংশটির তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি। যে অংশ যত উপরে তার তাপমাত্রা তত কম। ফলে যদি একাধিক তরলের মিশ্রণকে তাপ দিয়ে বাষ্পীভূত করে আংশিক পাতন কলামের নিচের অংশে প্রবেশ করানাে হয় তবে বাষ্পের ধর্ম অনুযায়ী তা কলামের উপরের দিকে উঠবে। যেহেতু উপরের অংশগুলাের তাপমাত্রা কম থাকে, তাই তরলের মিশ্রণের প্রত্যেকটি উপাদান তাদের ফুটনাঙ্ক অনুযায়ী আংশিক পাতন কলামের বিভিন্ন অংশে পৃথক হয়।
চিত্র: পেট্রোলিয়ামের আংশিক পাতন
পেট্রোলিয়াম বিভিন্ন হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ। এদের স্ফুটনাঙ্কও বিভিন্ন। অপরিশােধিত তেল ব্যবহারের উপযুক্ত নয়, কিন্তু একে যদি আংশিক পাতনের সাহায্যে পৃথক করা হয় তবে এ অপরিশােধিত তেল থেকে পেট্রল, গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, ন্যাপথা, কেরােসিন, ডিজেল, প্যারাফিন মােম এবং পিচ প্রভৃতি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। আংশিক পাতন কলাম থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন অংশের নাম, বিভিন্ন অংশের স্ফুটনাঙ্ক, বিভিন্ন অংশে যে হাইড্রোকার্বনসমূহ থাকে তাদের কার্বন সংখ্যা এবং তাদের ব্যবহার নিচে বর্ণনা করা হলাে:
(i) পেট্রোলিয়াম গ্যাস: এ অংশের ফুটনাঙ্ক 0°C থেকে 20°C পর্যন্ত। এ অংশে যে হাইড্রোকার্বনসমূহ থাকে তাদের অণুতে কার্বন সংখ্যা 1 থেকে 4 পর্যন্ত। পেট্রোলিয়ামে শতকরা দুই ভাগ পেট্রোলিয়াম গ্যাস থাকে। এ গ্যাসকে চাপ প্রয়ােগ করে তরলে পরিণত করে সিলিন্ডারে ভর্তি করা হয় এবং LPG (Liquefied Petroleum Gas) নামে রান্নার কাজে ও অন্যান্য কাজে তাপ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
(ii) পেট্রোল (গ্যাসােলিন): এ অংশের স্ফুটনাঙ্ক 21°C থেকে 70°C পর্যন্ত। এ অংশে যে হাইড্রোকার্বনসমূহ থাকে তাদের অণুতে কার্বন সংখ্যা 5 থেকে 10 পর্যন্ত। পেট্রোলিয়ামে শতকরা 5 ভাগ পেট্রল থাকে। একে গ্যাসােলিনও বলা হয়। যানবাহনের ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে গ্যাসােলিন ব্যবহার করা হয়।
(iii) ন্যাপথা: এ অংশের ফুটনাঙ্ক 71°C থেকে 120°C পর্যন্ত। এ অংশে যে হাইড্রোকার্বনসমূহ থাকে তাদের অণুতে কার্বন সংখ্যা 7 থেকে 14 পর্যন্ত। পেট্রোলিয়ামে শতকরা 10 ভাগ ন্যাপথা থাকে। জ্বালানি ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও অন্যান্য অনেক ব্যবহার্য দ্রব্য তৈরি করা হয়।
(iv) কেরােসিন: এ অংশের ফুটনাঙ্ক 121°C থেকে 170°C পর্যন্ত। এ অংশে যে সকল হাইড্রোকার্বন থাকে তাদের অণুতে কার্বন সংখ্যা 11 থেকে 16 পর্যন্ত। পেট্রোলিয়ামে শতকরা 13 ভাগ কেরােসিন থাকে। পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে জেট ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
(v) ডিজেল: এ অংশের স্ফুটনাঙ্ক 171°C থেকে 270°C পর্যন্ত। এ অংশে যে হাইড্রোকার্বনসমূহ থাকে তাদের অণুতে কার্বন সংখ্যা 17 থেকে 20 পর্যন্ত। যানবাহনের জ্বালানি, পিচ্ছিলকারক পদার্থ ও দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
(vi) প্যারাফিন মােম: এ অংশের স্ফুটনাঙ্ক 271°C থকে 340°C পর্যন্ত । এ অংশে যে হাইড্রোকার্বনসমূহ থাকে তাদের অণুতে কার্বন সংখ্যা 20 থেকে 30 পর্যন্ত। প্যারাফিন মােম টয়লেট্রিজ এবং ভ্যাসলিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
(vii) পিচ: এ অংশের স্ফুটনাঙ্ক 340°C থেকে উচ্চ তাপমাত্রা পর্যন্ত। এ অংশে যে হাইড্রোকার্বনসমূহ থাকে তাদের অণুতে কার্বন সংখ্যা 30 এর বেশি। রাস্তা তৈরিতে এটি কাজ লাগে।
পাতিত অংশ | পাতন তাপমাত্রা (স্ফুটনাঙ্ক) | কার্বন সংখ্যার পরিসর | শতকরা পরিমাণ | ব্যবহার | |
১ | পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা LPG | 0°C – 20°C | C1 – C4 | 2% | এ গ্যাসকে চাপ প্রয়ােগ করে তরলে পরিণত করে সিলিন্ডারে ভর্তি করা হয় এবং LPG (Liquefied Petroleum Gas) নামে রান্নার কাজে ও অন্যান্য কাজে তাপ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়। |
২ | পেট্রোল (গ্যাসােলিন) | 21°C – 70°C | C5 – C10 | 5% | যানবাহনের(কার, মাইক্রোবাস) ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে গ্যাসােলিন ব্যবহার করা হয়। |
৩ | ন্যাপথা | 71°C -120°C | C7 – C14 | 10% | জ্বালানি ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও অন্যান্য অনেক ব্যবহার্য দ্রব্য তৈরি করা হয়। |
৪ | কেরােসিন | 121°C – 170°C | C11 – C16 | 13% | পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে জেট ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। |
৫ | ডিজেল | 171°C – 270°C | C17 – C20 | 20% | যানবাহনের জ্বালানি, পিচ্ছিলকারক পদার্থ ও দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। |
৬ | প্যারাফিন মােম | 271°C – 340°C | C20 – C30 | 50% | প্যারাফিন মােম টয়লেট্রিজ এবং ভ্যাসলিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। |
৭ | লুব্রেকেটিং অয়েল | 271°C – 340°C | C20 – C35 | পিচ্ছিলকারক পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। | |
৮ | পিচ বা বিটুমিন | 340°C এর ঊর্ধ্বে | C30 এর বেশি। | রাস্তা তৈরিতে এটি কাজ লাগে। |