রাসায়নিক শক্তির আধার হিসেবে আমরা নানা ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করি। বিশেষ করে কাঠ, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে যাচ্ছি। এ সমস্ত জ্বালানি বিশুদ্ধ হওয়া একান্ত জরুরি। স্বল্প বায়ুর উপস্থিতিতে এসব জ্বালানি পােড়ালে কার্বন ডাই-অক্সাইডের সাথে কার্বন মনােক্সাইড উৎপন্ন হয়, যেটি বিষাক্ত একটি গ্যাস। এগুলাে আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রকৃতিতে যে জ্বালানি পাওয়া যায়, সেগুলাে মূলত অবিশুদ্ধ থাকে। এর সাথে নাইট্রোজেন, সালফার, ফসফরাস প্রভৃতি মৌলের বিভিন্ন যৌগ মিশ্রিত থাকে। সেজন্য বাজারে এসব জ্বালানি ছাড়ার আগে যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ করে নেওয়া দরকার। বিশুদ্ধ না করে সে জ্বালানি পােড়ালে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের সাথে এসব মৌলের অক্সাইডও বাতাসে চলে আসে। এসব অক্সাইড বৃষ্টির পানির সাথে মিশে এসিড তৈরি করে। ফলে তখন যে বৃষ্টি হয় তার সাথে এ এসিডগুলাে যথেষ্ট পরিমাণে মিশ্রিত থাকে। এ বৃষ্টিকে এসিড বৃষ্টি বলে।
এ এসিড বৃষ্টি পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। গাছপালা মরে যায়। জলাশয়ের পানি অম্লযুক্ত হয়ে যায়। ফলে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ায় কার্বন মনােক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ও অব্যবহৃত জ্বালানি (যেমন—মিথেন) থাকে। সূর্যের আলাের উপস্থিতিতে এগুলাে নানা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাসের ধোঁয়া সৃষ্টি করে। এদেরকে ‘ফটোকেমিক্যাল ধোঁয়া’ (photochemical smog) বলে। ফটোকেমিক্যাল ধোঁয়ার বিভিন্ন উপাদান বায়ুমণ্ডলের ওজোন (O3) স্তরের ক্ষয়সাধন করে। ওজোন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। কাজেই এই স্তরের ক্ষয় সাধন হলে পৃথিবীর মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
তাই , জ্বালানির বিশুদ্ধতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।