পরীক্ষণের নাম: একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে বেকিং সোডা বা NaHCO3 এর সাথে ভিনেগারের (CH3COOH) বিক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্যাসের শনাক্তকরণ।
প্রয়ােজনীয় উপকরণ:
- একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাস ।
- বেকিং সোডা ।
- ভিনেগার ।
- একটি টেবিল চামচ ।
- চুনের পানি ।
- দিয়াশলাই ।
চিত্র :
পরীক্ষণ সংশ্লিষ্ট সঠিক উপকরণের যথাযথ ব্যবহার বা কার্যপদ্ধতি:
- একটি পরিষ্কার স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে এক টেবিল চামচ পরিমাণ বেকিং সোডা নিয়েছিলাম।
- উক্ত গ্লাসে দুই টেবিল-চামচ পরিমাণ ভিনেগার যোগ করেছিলাম। ফলে গ্লাসে বুদবুদ সৃষ্টি হয়েছিল।
সতর্কতা:
- একটি টেবিল চামচ দিয়ে বেকিং সোডা ও ভিনেগার সঠিকভাবে পরিমাপ করেছিলাম।
- কোনো রাসায়নিক পদার্থ যাতে শরীরে না লাগে সেই জন্য নিরাপদ পোশাক বা Apron ব্যবহার পরেছিলাম।
- চোখে যাতে কোনো রাসায়নিক পদার্থ না লাগে সেই জন্য সেফটি গগলস ব্যবহার করেছিলাম।
- উৎপন্ন গ্যাস যাতে নাকে প্রবেশ না করে সেই জন্য নিরাপদ মাস্ক পরেছিলাম।
- কাচের গ্লাস যাতে ভেঙ্গে না যায় সেই জন্য সতর্কতার সাথে ব্যবহার করেছিলাম।
- কোনো রাসায়নিক পদার্থ যাতে অপচয় না হয় সেই দিকে বিশেষভাবে সতর্ক ছিলাম।
পরীক্ষণে রাসায়নিক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ:
পরীক্ষণে বেকিং সোডা বা সোডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেট( NaHCO3 ) এর সাথে ভিনেগারের (CH3COOH) বিক্রিয়া করে সোডিয়াম ইথানয়েট( CH3COONa), পানি (H2O) এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) গ্যাস উৎপন্ন করে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে বুদবুদ সৃষ্টি হয়। বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ:
NaHCO3 + CH3COOH = CH3COONa + H2O + CO2 (g)
অর্থাৎ এই বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থ হলো সোডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেট( NaHCO3 ) ও ভিনেগার বা এসিটিক এসিডের (CH3COOH) জলীয় দ্রবণ।
আর উৎপন্ন পদার্থসমূহ হলো সোডিয়াম ইথানয়েট( CH3COONa), পানি (H2O) এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) গ্যাস ।
উৎপন্ন গ্যাসের শনাক্তকরণ:
পরীক্ষণে সংঘটিত বিক্রিয়াটি হলো
NaHCO3 + CH3COOH = CH3COONa + H2O + CO2 (g)
সুতরাং , উৎপন্ন গ্যাসটি হলো কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 )
উৎপন্ন গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) শনাক্তকরণে ভৌত পদ্ধতি:
পরীক্ষণে উৎপন্ন গ্যাসটির বর্ণ ও গন্ধ লক্ষ্য করেছিলাম। গ্যাসটির কোনো বর্ণ ও গদ্ধ নেই । আমরা জানি , কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) একটি বর্ণহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস।
পরীক্ষণে স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে উৎপন্ন গ্যাসের কাছে একটি জ্বলন্ত দিয়াশলাইয়ের কাঠি ধরলে তা নিভে গিয়েছিল। আমরা জানি, কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) গ্যাস আগুন নিভাতে সাহায্য করে অর্থাৎ কার্বন ডাইঅক্সাইড নিজে জ্বলেনা এবং অন্যকে জ্বলতে সাহায্যও করেনা।
উৎপন্ন গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) শনাক্তকরণে রাসায়নিক পদ্ধতি:
একটি টেস্টটিউব বা পরীক্ষানলে পরিষ্কার চুনের পানি বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড নিয়ে তার মধ্যে উৎপন্ন গ্যাস প্রবেশ করিয়েছিলাম । প্রথমে সামান্য গ্যাস প্রবেশ করালে তা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে সাদা বর্ণের অধঃক্ষেপ তৈরি করে অর্থাৎ চুনের পানি ঘােলা হয় । এরপর আরও অধিক গ্যাস এই ঘােলা পানির মধ্যে প্রবেশ করালে চুনের ঘােলা পানি আবার পরিষ্কার হয় ।
আমরা জানি, CO2 গ্যাসকে পরিষ্কার চুনের পানির মধ্যে দিয়ে চালনা করলে চুনের পানি ঘোলা হয় । এক্ষেত্রে কার্বন ডাইঅক্সাইড চুনের পানি বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর সাথে বিক্রিয়া করে অদ্রবণীয় CaCO3 উৎপন্ন করে। ফলে চুনের পানি ঘােলা দেখায়। বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ:
Ca(OH)2 + CO2 → CaCO3 ↓+ H2O
এরপর আরও অধিক CO2 গ্যাস এই ঘােলা পানির মধ্যে প্রবেশ করালে ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পানি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বিক্রিয়া করে । ফলে চুনের ঘােলা পানি আবার পরিষ্কার হয়।
এক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পানি এবং অধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বিক্রিয়া করে দ্রবণীয় ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট তৈরি করে ।
বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ:
CaCO3 + CO2 + H2O → Ca(HCO3)2
এখানে দ্রবণীয় Ca(HCO3)2 উৎপন্ন হওয়ার জন্য চুনের ঘােলা পানি আবার পরিষ্কার হয়।
সুতরাং উপরিউক্ত ভৌত ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে প্রদত্ত পরীক্ষণে উৎপন্ন গ্যাসের সনাক্তকরণ পরীক্ষা ও বিক্রিয়া থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, উৎপন্ন গ্যাসটি কার্বন ডাই-অক্সাইড যার সংকেত CO2