বেকিং সোডা বা NaHCO3 এর সাথে ভিনেগারের (CH3COOH) বিক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্যাসের শনাক্তকরণ পদ্ধতি বর্ণনা কর।

পরীক্ষণের নাম: একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে বেকিং সোডা  বা NaHCO3 এর সাথে ভিনেগারের (CH3COOH) বিক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্যাসের শনাক্তকরণ।

প্রয়ােজনীয় উপকরণ:

  1. একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাস ।
  2. বেকিং সোডা ।
  3. ভিনেগার । 
  4. একটি টেবিল চামচ । 
  5. চুনের পানি ।
  6. দিয়াশলাই ।

চিত্র :

পরীক্ষণ সংশ্লিষ্ট সঠিক উপকরণের যথাযথ ব্যবহার বা কার্যপদ্ধতি:

  1. একটি পরিষ্কার স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে এক টেবিল চামচ পরিমাণ বেকিং সোডা নিয়েছিলাম।
  2. উক্ত গ্লাসে দুই টেবিল-চামচ পরিমাণ ভিনেগার যোগ করেছিলাম। ফলে গ্লাসে বুদবুদ সৃষ্টি হয়েছিল।

সতর্কতা: 

  1. একটি টেবিল চামচ দিয়ে বেকিং সোডা ও ভিনেগার সঠিকভাবে পরিমাপ করেছিলাম।
  2. কোনো রাসায়নিক পদার্থ যাতে শরীরে না লাগে সেই  জন্য নিরাপদ পোশাক বা Apron  ব্যবহার পরেছিলাম।
  1. চোখে যাতে কোনো রাসায়নিক পদার্থ না লাগে সেই  জন্য সেফটি গগলস ব্যবহার করেছিলাম।
  2. উৎপন্ন গ্যাস যাতে নাকে প্রবেশ না করে সেই  জন্য নিরাপদ মাস্ক পরেছিলাম।
  3. কাচের  গ্লাস যাতে ভেঙ্গে না যায় সেই জন্য সতর্কতার সাথে ব্যবহার করেছিলাম।
  4. কোনো রাসায়নিক পদার্থ যাতে অপচয় না হয় সেই দিকে বিশেষভাবে সতর্ক ছিলাম।

পরীক্ষণে রাসায়নিক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ:

পরীক্ষণে বেকিং সোডা বা সোডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেট( NaHCO3 ) এর সাথে ভিনেগারের (CH3COOH) বিক্রিয়া করে সোডিয়াম ইথানয়েট( CH3COONa), পানি (H2O) এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) গ্যাস উৎপন্ন করে।  এক্ষেত্রে স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে বুদবুদ সৃষ্টি হয়। বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ:

NaHCO3  CH3COOH  =  CH3COONa  +  H2O +  CO2 (g)

অর্থাৎ  এই বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থ হলো  সোডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেট( NaHCO3 ) ও  ভিনেগার বা এসিটিক এসিডের  (CH3COOH) জলীয় দ্রবণ।

আর উৎপন্ন পদার্থসমূহ হলো সোডিয়াম ইথানয়েট( CH3COONa), পানি (H2O) এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) গ্যাস ।

উৎপন্ন গ্যাসের শনাক্তকরণ:

পরীক্ষণে সংঘটিত বিক্রিয়াটি হলো 

NaHCO3  +  CH3COOH  =  CH3COONa  +  H2O +  CO2 (g)

সুতরাং ,  উৎপন্ন গ্যাসটি হলো কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 )

উৎপন্ন গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) শনাক্তকরণে ভৌত পদ্ধতি:

পরীক্ষণে উৎপন্ন গ্যাসটির বর্ণ ও গন্ধ লক্ষ্য করেছিলাম। গ্যাসটির কোনো বর্ণ ও  গদ্ধ নেই । আমরা জানি , কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) একটি বর্ণহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস।

পরীক্ষণে স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে উৎপন্ন গ্যাসের কাছে একটি জ্বলন্ত দিয়াশলাইয়ের কাঠি  ধরলে তা নিভে গিয়েছিল। আমরা জানি, কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) গ্যাস আগুন নিভাতে সাহায্য করে অর্থাৎ  কার্বন ডাইঅক্সাইড নিজে জ্বলেনা এবং অন্যকে জ্বলতে সাহায্যও  করেনা।

উৎপন্ন গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) শনাক্তকরণে রাসায়নিক পদ্ধতি:

একটি টেস্টটিউব বা পরীক্ষানলে পরিষ্কার চুনের পানি বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড নিয়ে তার মধ্যে উৎপন্ন গ্যাস প্রবেশ করিয়েছিলাম । প্রথমে সামান্য গ্যাস প্রবেশ করালে তা  ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে সাদা বর্ণের অধঃক্ষেপ তৈরি করে অর্থাৎ চুনের পানি ঘােলা হয় ।  এরপর আরও অধিক গ্যাস এই ঘােলা পানির মধ্যে প্রবেশ করালে চুনের ঘােলা পানি আবার পরিষ্কার হয় ।

আমরা জানি,  CO2 গ্যাসকে পরিষ্কার চুনের পানির মধ্যে দিয়ে চালনা করলে চুনের পানি ঘোলা হয় । এক্ষেত্রে কার্বন ডাইঅক্সাইড চুনের পানি বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর সাথে বিক্রিয়া করে অদ্রবণীয় CaCO3 উৎপন্ন করে। ফলে চুনের পানি ঘােলা দেখায়। বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ:

  Ca(OH)2 + CO2 → CaCO3 ↓+ H2O

এরপর আরও অধিক CO2 গ্যাস এই ঘােলা পানির মধ্যে প্রবেশ করালে ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পানি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বিক্রিয়া করে । ফলে  চুনের ঘােলা পানি আবার পরিষ্কার হয়।

এক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পানি এবং  অধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বিক্রিয়া করে দ্রবণীয় ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট তৈরি করে ।

বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ:

 CaCO3 + CO2 + H2O → Ca(HCO3)2  

এখানে দ্রবণীয় Ca(HCO3)2  উৎপন্ন হওয়ার জন্য চুনের ঘােলা পানি আবার পরিষ্কার হয়।

সুতরাং উপরিউক্ত ভৌত ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে প্রদত্ত  পরীক্ষণে উৎপন্ন গ্যাসের সনাক্তকরণ পরীক্ষা ও বিক্রিয়া থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, উৎপন্ন গ্যাসটি কার্বন ডাই-অক্সাইড যার সংকেত CO2 

Leave a Comment

error: Content is protected !!