আমাদের জীবনে রসায়ন পাঠের গুরুত্ব:
আমাদের জীবনে রসায়ন পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম । আমরা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ব্রাশে একটু পেস্ট লাগিয়ে দাঁত মাজি। তারপর বই নিয়ে পড়তে বসে পড়ার সময় চা আর বিস্কুট খাই । বাথরুমটা একটু নােংরা হলে টয়লেট ক্লিনার দিয়ে টয়লেট পরিষ্কার করি। গােসল করার সময় আমরা ব্যবহার করি সুগন্ধি সাবান আর শ্যাম্পু। গােসল শেষে গায়ে একটু লােশন মাখি । তারপর সকালের নাশতা করি । স্কুলে শিক্ষক চক দিয়ে বাের্ডে লিখে পড়া বুঝিয়ে দেন । অর্থাৎ আমরা যে জিনিসগুলাে ব্যবহার করি যেমন- পেস্ট, ব্রাশ, বিস্কুট, টয়লেট ক্লিনার, সাবান, শ্যাম্পু, লােশন কিংবা চক সবই রসায়নের অবদান।
এছাড়া জমিকে উর্বর করার জন্য তৈরি করা হয়েছে সার। ক্ষেতের ফসল যেন পােকা-মাকড়ে নষ্ট না করে তার জন্য মানুষ তৈরি করেছে কীটনাশক (insecticides)। খাদ্যকে দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করার জন্য তৈরি করেছে প্রিজারভেটিভস (preservatives) জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ। অর্থাৎ চাষাবাদ কিংবা খাদ্যের জন্য আমরা রসায়নের উপর নির্ভর করি । আজ কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষ্মা ইত্যাদি যে সমস্ত রােগ মানুষের জন্য অতি সাধারণ চিকিৎসাযােগ্য রােগ, একসময় এ ধরনের রােগেই লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। রসায়নের জ্ঞান ব্যবহার করে মানুষ এ সকল রােগের ওষুধ সফলতার সাথে আবিষ্কার করেছে। এখন ওষুধের আবিষ্কার এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে ক্যানসারের মতাে মরণব্যাধি থেকেও মানুষ অনেক ক্ষেত্রে রক্ষা পেয়েছে।
শিল্পকারখানা, যানবাহন, মানুষের ব্যবহার্য সামগ্রী থেকে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক বর্জ্য আমাদের পরিবেশের ক্ষতিসাধন করছে। এর মাঝে রয়েছে কার্বন ডাই-অক্সাইড(CO2), কার্বন মনােক্সাইড(CO), সালফার ডাই-অক্সাইড(SO2), বিভিন্ন এসিড, বিভিন্ন ভারী ধাতু (যেমন- পারদ(Hg), লেড(Pb), আর্সেনিক(As), কোবাল্ট(Co) ইত্যাদি) সহ আরও অনেক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য। এগুলাে বায়ুর সাথে মিশে বায়ুদূষণ, পানির সাথে মিশে পানিদূষণ এবং অন্যান্য উপায়ে পরিবেশের ক্ষতিসাধন করেই চলেছে। এগুলাে বিভিন্ন উদ্ভিদ বা মাছের শরীরে প্রবেশ করে তাদের ক্ষতিসাধন করছে। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ। যেমন— ফসলের ক্ষেতে ক্ষতিকারক পােকা-মাকড় ধ্বংস করার কাজে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তা প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ঐ অতিরিক্ত কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পুকুর, নদ-নদী, খাল-বিলের পানিতে গিয়ে পড়ে যা ঐ পানিকে দূষিত করে। আবার, বাতাসের সাথে মিশে বাতাসকে দূষিত করে অর্থাৎ কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। রসায়ন পাঠ করে এ রকম প্রকৃতি ও বাস্তব জীবনের অনেক কিছুই আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি
অর্থাৎ রসায়ন একদিকে যেমন অনেক প্রয়ােজনীয় ও মূল্যবান জিনিস আবিষ্কার করছে, তেমনই তার অযৌক্তিক এবং অবিবেচকের মতাে ব্যবহার পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে। এখনাে অনেক রােগের ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। আরও রসায়ন অধ্যয়ন ও গবেষণা করে সেসব ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা করা এখন আমাদের দায়িত্ব। কাজেই রসায়ন পাঠ করে একদিকে আমরা যেরকম মানবকল্যাণের জন্য প্রয়ােজনীয় অনেক নতুন জিনিস তৈরি করতে পারি , একই সাথে পরিবেশের জন্য কোনটি ক্ষতিকর সেটি বুঝতেও পারি । সুতরাং আমাদের জীবনে রসায়ন পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।