রাসায়নিক শক্তি এবং রাসায়নিক শক্তি থেকে পাওয়া বিভিন্ন শক্তির ব্যবহার:
পদার্থের অণু-পরমাণুর মধ্যে রাসায়নিক শক্তি সঞ্চিত থাকে। একটি পদার্থ যখন আরেকটি পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে তখন রাসায়নিক শক্তি পাওয়া যায়। এ শক্তিকে পরবর্তীতে বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তর করে আমাদের বিভিন্ন কাজে লাগাই। পৃথিবীতে সকল প্রকার শক্তির মাঝে রাসায়নিক শক্তি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
রান্নার কাজে আমরা জ্বালানি হিসেবে কাঠ বা প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করি। কাঠ বা প্রাকৃতিক গ্যাস পােড়ালে এদের ভিতরের রাসায়নিক শক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কাঠ পােড়ালে যে তাপ পাওয়া যায় সে তাপ ব্যবহার করে ইটের ভাটায় ইট এবং মাটির বিভিন্ন পাত্র তৈরি করা হয়। লােহা, ইস্পাত বা সিরামিকস প্রভৃতি কারখানায় প্রচুর তাপের প্রয়ােজন হয়। কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি খনিজ জ্বালানি তাপ ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়। এ জ্বালানি ইঞ্জিনের দহন চেম্বারে পুড়িয়ে যে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় তাকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে মােটর গাড়ি, জাহাজ, বিমান, রেলগাড়ি ইত্যাদি চালানাে হয়।
রাসায়নিক শক্তির কথা বলতে গেলে প্রথমেই যেটি সামনে চলে আসে সেটি হলাে সালােক সংশ্লেষণ। উদ্ভিদের সবুজ অংশে ক্লোরােফিল থাকে, এই ক্লোরােফিলের সহায়তায় এবং সূর্যালােক ব্যবহার করে উদ্ভিদ মাটি থেকে মূল দিয়ে শােষিত পানি ও বায়ু থেকে শােষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড বিক্রিয়া করে গ্লুকোজ (C6H12O6) নামক শর্করা তৈরি করে, সেই সাথে অক্সিজেনও উৎপন্ন হয়। এ অক্সিজেন উদ্ভিদ থেকে বের হয়ে যায়। এ বিক্রিয়াটিকেই আমরা সালােক সংশ্লেষণ বলি। তবে সালােক সংশ্লেষণ ঘটাতে উদ্ভিদ যে সূর্যালােক ব্যবহার করে তা রাসায়নিক শক্তি হিসেবে শর্করার মধ্যে থেকে যায়।
এছাড়া উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে প্রােটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়। এগুলােতেও রাসায়নিক শক্তি মজুদ থাকে। আবার, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকুল এগুলাে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহকে রাসায়নিক যন্ত্র বলা যেতে পারে। উদ্ভিদ এ শর্করা, প্রােটিন ও চর্বি জাতীয় খাদ্য থেকে রাসায়নিক শক্তি পায়। এ শক্তি তাপশক্তি বা অন্যান্য প্রকার শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ শক্তি ব্যবহার করে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল বিভিন্ন জৈবিক কার্যকলাপ করে। কাজেই বুঝতেই পারছ রাসায়নিক শক্তি ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব।