দৈনন্দিন জীবনে প্রশমন বিক্রিয়ার গুরুত্ব ব্যাখ্যা:
পরিপাক: খাদ্য হজম করতে পাকস্থলীতে হাইড্রাক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয়। কোনাে কারণে পাকস্থলীতে এই এসিডের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তখন পেটে অস্বস্তি বােধ হয়। সাধারণভাবে এটিকে এসিডিটি বলে। বেশিদিন এসিডিটি থাকলে পাকস্থলীতে ঘা হয়ে যেতে পারে। তাই এই এসিডকে প্রশমিত করতে এন্টাসিড নামক ওষুধ খেতে হয়। এন্টাসিডে Al(OH)3 ও Mg(OH)2 থাকে। এরা ক্ষারজাতীয় পদার্থ। তাই পেটের অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিডকে এরা প্রশমিত করে।
Al(OH)3 + 3HCl→ AlCl3 + 3H2O
Mg(OH)2 + 2HCl → MgCl2 + 2H2O
দাঁতের যত্নে: কখনাে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেয়ে মুখ পরিষ্কার না করলে কিছুক্ষণ পর মুখে টক টক অনুভূত হয়। আসলে মুখের মধ্যে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আমাদের খাওয়া খাবার থেকে বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড তৈরি করে। তাই মুখে টক স্বাদ অনুভূত হয়। এই এসিড দাঁতের এনামেলকে (ক্যালসিয়ামের যৌগ) ক্ষয় করে। টুথপেস্টে থাকা ক্ষারজাতীয় পদার্থ এ সকল এসিডকে প্রশমিত করে। ফলে দাঁতের এনামেল রক্ষা পায়।
কৃষিক্ষেত্রে: গাছ যখন মাটি থেকে বিভিন্ন ধাতব আয়ন যেমন– Fe2+, Mg2+, Ca2+, K+ ইত্যাদি শােষণ করে তখন মাটি অম্লীয় হয়ে যায়। মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে চুন ব্যবহার করতে হয়। চুনের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO)। চুন মাটির অতিরিক্ত এসিডকে প্রশমিত করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। তাই বলা যায় কৃষিক্ষেত্রে প্রশমন বিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ।
কেক তৈরিতে : কেক তৈরিতে বেকিং পাউডার ব্যবহার করা হয়। এতে এসিড ও ক্ষার দুটোই উপস্থিত থাকে। ক্ষার জাতীয় পদার্থ সােডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেট এবং টারটারিক এসিডের শুষ্ক মিশ্রণ হলাে বেকিং পাউডার। শুষ্ক অবস্থায় এদের মধ্যে কোনাে বিক্রিয়া হয় না। তবে পানি যােগ করলে প্রশমন বিক্রিয়া হয় এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন। কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ময়দাকে ফোলায়। কেক চুলায় দিলে উত্তাপে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি ও আয়তন সম্প্রসারণ ঘটে। ফলে কেক অনেক ফোলে এবং নরম হয়।