তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ ও তাদের ব্যবহার।তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ এর ব্যবহার।

তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ:

কিছু কিছু আইসােটোপ রয়েছে যাদের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে (নিজে নিজেই) ভেঙ্গে আলফা রশ্মি (𝞪), বিটা রশ্মি,(𝜷) গামা রশ্মি (ɣ) ইত্যাদি নির্গত করে তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ বলে।

তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ-এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার দিয়ে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে যেটি অন্যভাবে করা দুঃসাধ্য ছিল। বর্তমানে তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ চিকিৎসাক্ষেত্রে, কৃষিক্ষেত্রে, খাদ্য ও বীজ সংরক্ষণে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে, কোনাে কিছুর বয়স নির্ণয়সহ আরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

চিকিৎসাক্ষেত্রে:

চিকিৎসাক্ষেত্রে বর্তমানে বিভিন্ন প্রয়ােজনে তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন:

রােগ নির্ণয়ে:

আইসােটোপ ব্যবহার করে রােগাক্রান্ত স্থানের ছবি তােলা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ টেকনিশিয়াম-99 (99TC) কে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করানাে হয়।

এই আইসােটোপ যখন শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে জমা হয় তখন ঐ তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ গামা রশ্মি বিকিরণ করে, তখন বাইরে থেকে গামা রশ্মি শনাক্তকরণ ক্যামেরা দিয়ে সেই স্থানের ছবি তােলা সম্ভব।

এই তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ টেকনিশিয়াম-99 এর লাইফটাইম 6 ঘণ্টা। তাই সামান্য সময়েই এর তেজস্ক্রিয়তা শেষ হয়ে যায় বলে এটি অনেক নিরাপদ।

রােগ নিরাময়ে:

সর্বপ্রথম থাইরয়েড ক্যানসার নিরাময়ে তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ ব্যবহার করা হয়। রােগীকে পরিমাণমতাে তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ 131I সমৃদ্ধ দ্রবণ পান করানাে হয়। এই আইসােটোপ থাইরয়েডে পৌঁছায় ।এ আইসােটোপ থেকে বিটা রশ্মি নির্গত হয় এবং থাইরয়েডের ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করে। অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থির কোষ-কলা বৃদ্ধি প্রতিহত করতে  তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ 131I ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া ইরিডিয়াম আইসােটোপ ব্রেইন ক্যানসার নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। টিউমারের উপস্থিতি নির্ণয় ও নিরাময়ে তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ 60Co ব্যবহার করা হয়। 60Co থেকে নির্গত গামা রশ্মি ক্যানসারের কোষকলাকে ধ্বংস করে। রক্তের লিউকোমিয়া রােগের চিকিৎসায় 32p এর ফসফেট ব্যবহার করা হয়।

কৃষিক্ষেত্রে:

ফসলের পুষ্টিতে:

ফসলের পুষ্টির জন্য জমিতে পরিমাণমতাে সার ব্যবহার করতে হয়। সার মূল্যবান বস্তু। তাই অতিরিক্ত ব্যবহার করা আর্থিক ক্ষতির কারণ। একদিকে প্রয়ােজনের অতিরিক্ত সার পরিবেশের ক্ষতির কারণ, অপরদিকে প্রয়ােজনের চেয়ে কম পরিমাণ সার ব্যবহার করা হলে ফসলের উৎপাদন কম হয়।

তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ ব্যবহার করে জমিতে কী পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাস আছে তা জানা যায়। আর তা জেনে জমিতে আরও কী পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাস প্রয়ােজন তারও হিসাব করা যায়।

উদ্ভিদ তেজস্ক্রিয় নাইট্রোজেন ও তেজস্ক্রিয় ফসফরাস মূলের মাধ্যমে গ্রহণ করে এবং তা উদ্ভিদের শরীরের বিভিন্ন অংশে শােষিত হয়। এসকল তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়। গাইগার মুলার কাউন্টার ব্যবহার করে এ তেজস্ক্রিয় রশ্মি শনাক্ত ও পরিমাপ করা হয়। রক্তের লিউকোমিয়া রােগের চিকিৎসায় 32p এর ফসফেট ব্যবহার করা হয়।(চিকিৎসাক্ষেত্রে)

ক্ষতিকারক পােকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে:

ফসলের জন্য ক্ষতিকারক পােকামাকড় সব সময়ই মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এগুলাে যেমন ফসলের উৎপাদন কমায় তেমনই এদের মাধ্যমে রােগ-জীবাণুও উদ্ভিদে প্রবেশ করে। এ সকল পােকামাকড় ধ্বংস করার জন্য ফসলে এবং জমিতে কীটনাশক দেওয়া হয়। এ কীটনাশক পরিবেশ ও আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

শুধু তাই নয়, এ কীটনাশক ক্ষতিকারক পােকামাকড়ের সাথে সাথে অনেক উপকারী পােকামাকড়ও ধ্বংস করে। তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ সমৃদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়েছে সর্বনিম্ন কতটুকু পরিমাণ কীটনাশক একটি ফসলের জন্য ব্যবহার করা যাবে।

ফসলের মানােন্নয়নে:

বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রিত তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভিদ কোষের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে উন্নত মানের ফসলে পরিণত করা হয়।

কার্বনের তেজস্ক্রিয় আইসােটোপের ব্যবহার:

14C তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ দ্বারা ফসিল মমিসহ পৃথিবীর যাবতীয় প্রাচীন বস্তু, এমনকি পৃথিবীর বয়স নির্ধারণ করা যায়।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে:

কিছু কিছু পরমাণুকে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুতে পরিণত করলে অর্থাৎ ফিশান বিক্রিয়া ঘটালে প্রচুর পরিমাণে তাপশক্তি বের হয়। এই তাপশক্তি ব্যবহার করে জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। আমরা সেটিকে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র বলি।

বাংলাদেশে পাবনা জেলার রূপপুরে বাংলাদেশ সরকার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে দুই হাজার চারশত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!